আমার বিয়া হইবো না ক্যান?
- গল্প লিখেছেনঃ শারমিন আক্তার
- তারিখঃ 2017-04-19
- ভিজিটঃ 2459
আগস্ট মাসের শুরু। হঠাৎ করেই শুরু হলো ঝুম বৃষ্টি সাথে বিদ্যুত চমকানো আর গভীর বজ্রপাতের আওয়াজ। এরই মধ্যে ইউ.এন. ও স্যার ফোনে জানালেন মোক্তারপুর ইউনিয়ন কালাই গ্রামে বাল্যবিয়ের সংবাদ পাওয়া গেছে। এখনি সেখানে যাও ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নাও। স্যার কি একটা মিটিং এ জেলা কালেক্টরেটে গিয়েছেন। উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে বিষয়টি জানালাম এবং যাবার বিষয়ে অবহিত করলাম। পরিবহন সংকটে প্র¯তুতি নিতে নিতে ঘন্টাখানেক সময় লাগলো। ইতিমধ্যে ওসি সাহেব ফোর্স পাঠিয়ে দিয়েছেন।
বৃষ্টি কিছুটা কমলে সকাল ১১.৩০ এর দিকে একটা গাড়ি নিয়ে রওয়ানা দিলাম। উদ্দেশ্য মহৎ হলেও বৃষ্টির কারনে রা¯তায় বেহাল দশা যেন কিঞ্চিত রসিকতা করছিলো। গাড়িতে বসেই ঠিকানা সংগ্রহ করছিলাম। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান ও মেম্বার সাহেবদের ঘটনাস্থালে হাজির থাকার অনুরোধ জানাচ্ছিলাম।
দূরত্ব আধ ঘন্টার কম হলেও আমাদের পৌছাতে এক ঘন্টারও কিছু বেশি সময় লাগলো। গাড়ি থেকে নামবার আগেই শুরু হলো আবার ঝুম বৃষ্টি। আমাদের কাঙ্খিত স্পটে যেতে হলে গাড়ি রা¯তায় রেখে অনেকটা ঢালু পথে (কাঁদা মাটির পিচ্ছিল পথ) পাঁচ মিনিট হেটে যেতে হবে। সময় নষ্ট করার মতো সময় না থাকায় ছাতা নিয়ে নেমে পড়লাম (যদিও তা বৃষ্টি প্রকোপ অনুযায়ী যথেষ্ট ছিল না) কেউ কেউ বলছিল ম্যাডাম সাবধান। অনেক পিচ্ছিল পড়ে যাবেন। যাই হোক সাবধানে সেই পথ পাড়ি দিয়ে গšতব্যে যখন পৌছালাম তখন এক হৃদয় বিদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো।
বৃষ্টির কারনে বাড়ির বাইরে দাঁড়ানো সম্ভব হলোনা। ভেতরে যেতেই হই-হল্লোর শুরু হলো। বাড়ির বাইরে থেকেই বোঝা যায় নিতাšত অসচ্ছল এই পরিবার। পুলিশ সদস্যদের ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদে পরিবারের সদস্যগণ (অবশ্য বোঝা যাচ্ছিলো না কে বা কারা পরিবারের সদস্য) অসহায় বোধ করছিলেন। আমি তাঁদের কে শাšত হতে বললাম। জানতে চাইলাম বিয়ে হচ্ছে তাকে আমার কাছে নিয়ে আসেন আর আমি আপনাদের সাথে একটু কথা বলতে এসেছি।
আমার কথায় তাঁরা যেনো একটা শাšিত তথা স্ব¯িত পেলো। মেয়ের মা মেয়েকে নিয়ে আমার কাছে এলেন। মেয়েটিকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। বয়স কত হবে ? দশ কি এগারো। দেখে আৎকে উঠলাম। দেখে মনে হলো মেয়েটির বয়স শুধু কম তাই নয়, মেয়েটি পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। মেয়েটি মুখ ঢেকে কাঁদছে। ভাবলাম জোড় করে বিয়ে দিচ্ছে বলে কষ্টে কাঁদছে। কাছে টেনে নিয়ে বললাম, তোমার তো এখন আর বিয়ে হবে না। এ কথা শুনে সে কাঁদতে কাঁদতে বললো, “আমার বিয়া হইবো না কেন?” বলার মধ্যে অভিমান নয় ছিলো রাগের বহিঃপ্রকাশ। আমার কারনে তার বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে বলে সে চরম বিরক্ত।
“আমার বিয়ে হইব না কেন?”-এ কথাটি শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। বুঝতে চেষ্টা করলাম সে কেন এ কথা বলছে। মেয়ের বাবার খোঁজ করলাম, পাওয়া গেলো না। মাকে জিজ্ঞাসা করলাম যার সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন সেই ছেলে কি করে? বললো ছেলেটি ভ্যান চালায়। আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। কিন্তু মেয়ে মানুষ একটা বিয়া দিলে বোঝা হালকা হয়। মাইয়া মানুষ যতদিন ঘরে থাকবো ততদিনই ঝামেলা। বুঝলাম মেয়েটি কেন এ কথা বলেছে।
ততক্ষনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব চলে এসেছেন। আমি মেয়েটিকে কাছে নিয়ে বুঝালাম এখানো তার বিয়ের বয়স হয়নি। অল্প বয়সে বিয়ে হলে কি সমস্যা হতে পারে, লেখা পড়া শিখে সে আর্থিক ভাবে সাবলম্বী হলে কেউ আর তাকে বোঝা মনে করবে না। মেয়ের মাকে বললাম যে মেয়েকে বোঝা মনে করছেন সে মেয়েকে সম্পদে পরিণত করতে না পারলে এই বোঝা ও গজব হয়ে আপনার উপরই পড়বে। অল্প বয়সে মা হলে এই মেয়ে মারাও যেতে পারে। আর যদিও বাঁচে তা সমাজে আপদ হয়ে বাঁচবে। সে নিজেও সুস্থ্য থাকবেনা, বাচ্চাও সুস্থ থাকবে না।
বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় আশ-পাশ থেকে প্রচুর লোকের সমাগম ঘটে। চেয়ারম্যান সাহেব ও বাল্যবিয়ের বিপক্ষে সবাইকে অবগত করলাম। আমি সবাইকে বললাম আইনগত শা¯িতর বিষয়ে। পাশাপাশি এও বললাম মেয়েটিকে শিক্ষিত করলে মেয়েটি কি আমার মতো হতে পারবে না। কথা শুনে মেয়েটির মা এবার কাঁদতে কাঁদতে আমার কাছে এসে বললেন, ‘মাগো আমরা গরীব মানুষ। আমরা কি এতবড় স্বপ্ন দেখতে পারি। আমি বললাম সরকার তো সবার পড়াশুনা শেখানোর দায়িত্ব নিয়েছে। আপনি ভাবছেন কেন? আপনি মেয়েকে স্কুলে পাঠান। কোন সমস্যা হলে চেয়ারম্যান সাহেব আছেন, আমরা আছি। আমাদেরকে জানাবেন। আমি আমার ফোন নম্বর দিয়ে বললাম যে কোন সহযোগীতা লাগলে আমাকে জানাবেন। এরপর একটা মুচলেকা নিয়ে এবং এ বিষয়ে খোঁজ খবর সবার দায়িত্বে চেয়ারম্যান সাহেব (যেহেতু তিনি স্বেচ্ছায় দায়িত্ব নিলেন) কে দিয়ে বিদায় নিলাম। ফেরার পথে সামাজিক অবক্ষয়ের কথা ভেবে মনটা বিষন্ন হয়ে গেলো। আর কানে বাজতে থাকলো একটা ১০-১১ বছরের বাচ্চার কন্ঠ...।
আমার বিয়া হইবো না ক্যান ?
বৃষ্টি কিছুটা কমলে সকাল ১১.৩০ এর দিকে একটা গাড়ি নিয়ে রওয়ানা দিলাম। উদ্দেশ্য মহৎ হলেও বৃষ্টির কারনে রা¯তায় বেহাল দশা যেন কিঞ্চিত রসিকতা করছিলো। গাড়িতে বসেই ঠিকানা সংগ্রহ করছিলাম। পাশাপাশি ইউনিয়ন পরিষদের সম্মানিত চেয়ারম্যান ও মেম্বার সাহেবদের ঘটনাস্থালে হাজির থাকার অনুরোধ জানাচ্ছিলাম।
দূরত্ব আধ ঘন্টার কম হলেও আমাদের পৌছাতে এক ঘন্টারও কিছু বেশি সময় লাগলো। গাড়ি থেকে নামবার আগেই শুরু হলো আবার ঝুম বৃষ্টি। আমাদের কাঙ্খিত স্পটে যেতে হলে গাড়ি রা¯তায় রেখে অনেকটা ঢালু পথে (কাঁদা মাটির পিচ্ছিল পথ) পাঁচ মিনিট হেটে যেতে হবে। সময় নষ্ট করার মতো সময় না থাকায় ছাতা নিয়ে নেমে পড়লাম (যদিও তা বৃষ্টি প্রকোপ অনুযায়ী যথেষ্ট ছিল না) কেউ কেউ বলছিল ম্যাডাম সাবধান। অনেক পিচ্ছিল পড়ে যাবেন। যাই হোক সাবধানে সেই পথ পাড়ি দিয়ে গšতব্যে যখন পৌছালাম তখন এক হৃদয় বিদায়ক পরিস্থিতির সৃষ্টি হলো।
বৃষ্টির কারনে বাড়ির বাইরে দাঁড়ানো সম্ভব হলোনা। ভেতরে যেতেই হই-হল্লোর শুরু হলো। বাড়ির বাইরে থেকেই বোঝা যায় নিতাšত অসচ্ছল এই পরিবার। পুলিশ সদস্যদের ও মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার জিজ্ঞাসাবাদে পরিবারের সদস্যগণ (অবশ্য বোঝা যাচ্ছিলো না কে বা কারা পরিবারের সদস্য) অসহায় বোধ করছিলেন। আমি তাঁদের কে শাšত হতে বললাম। জানতে চাইলাম বিয়ে হচ্ছে তাকে আমার কাছে নিয়ে আসেন আর আমি আপনাদের সাথে একটু কথা বলতে এসেছি।
আমার কথায় তাঁরা যেনো একটা শাšিত তথা স্ব¯িত পেলো। মেয়ের মা মেয়েকে নিয়ে আমার কাছে এলেন। মেয়েটিকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। বয়স কত হবে ? দশ কি এগারো। দেখে আৎকে উঠলাম। দেখে মনে হলো মেয়েটির বয়স শুধু কম তাই নয়, মেয়েটি পুষ্টিহীনতায় ভুগছে। মেয়েটি মুখ ঢেকে কাঁদছে। ভাবলাম জোড় করে বিয়ে দিচ্ছে বলে কষ্টে কাঁদছে। কাছে টেনে নিয়ে বললাম, তোমার তো এখন আর বিয়ে হবে না। এ কথা শুনে সে কাঁদতে কাঁদতে বললো, “আমার বিয়া হইবো না কেন?” বলার মধ্যে অভিমান নয় ছিলো রাগের বহিঃপ্রকাশ। আমার কারনে তার বিয়ে ভেঙ্গে যাচ্ছে বলে সে চরম বিরক্ত।
“আমার বিয়ে হইব না কেন?”-এ কথাটি শুনে আমি হতভম্ব হয়ে গেলাম। বুঝতে চেষ্টা করলাম সে কেন এ কথা বলছে। মেয়ের বাবার খোঁজ করলাম, পাওয়া গেলো না। মাকে জিজ্ঞাসা করলাম যার সাথে বিয়ে দিতে চাচ্ছেন সেই ছেলে কি করে? বললো ছেলেটি ভ্যান চালায়। আর্থিক অবস্থা তেমন ভালো নয়। কিন্তু মেয়ে মানুষ একটা বিয়া দিলে বোঝা হালকা হয়। মাইয়া মানুষ যতদিন ঘরে থাকবো ততদিনই ঝামেলা। বুঝলাম মেয়েটি কেন এ কথা বলেছে।
ততক্ষনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহেব চলে এসেছেন। আমি মেয়েটিকে কাছে নিয়ে বুঝালাম এখানো তার বিয়ের বয়স হয়নি। অল্প বয়সে বিয়ে হলে কি সমস্যা হতে পারে, লেখা পড়া শিখে সে আর্থিক ভাবে সাবলম্বী হলে কেউ আর তাকে বোঝা মনে করবে না। মেয়ের মাকে বললাম যে মেয়েকে বোঝা মনে করছেন সে মেয়েকে সম্পদে পরিণত করতে না পারলে এই বোঝা ও গজব হয়ে আপনার উপরই পড়বে। অল্প বয়সে মা হলে এই মেয়ে মারাও যেতে পারে। আর যদিও বাঁচে তা সমাজে আপদ হয়ে বাঁচবে। সে নিজেও সুস্থ্য থাকবেনা, বাচ্চাও সুস্থ থাকবে না।
বৃষ্টি থেমে যাওয়ায় আশ-পাশ থেকে প্রচুর লোকের সমাগম ঘটে। চেয়ারম্যান সাহেব ও বাল্যবিয়ের বিপক্ষে সবাইকে অবগত করলাম। আমি সবাইকে বললাম আইনগত শা¯িতর বিষয়ে। পাশাপাশি এও বললাম মেয়েটিকে শিক্ষিত করলে মেয়েটি কি আমার মতো হতে পারবে না। কথা শুনে মেয়েটির মা এবার কাঁদতে কাঁদতে আমার কাছে এসে বললেন, ‘মাগো আমরা গরীব মানুষ। আমরা কি এতবড় স্বপ্ন দেখতে পারি। আমি বললাম সরকার তো সবার পড়াশুনা শেখানোর দায়িত্ব নিয়েছে। আপনি ভাবছেন কেন? আপনি মেয়েকে স্কুলে পাঠান। কোন সমস্যা হলে চেয়ারম্যান সাহেব আছেন, আমরা আছি। আমাদেরকে জানাবেন। আমি আমার ফোন নম্বর দিয়ে বললাম যে কোন সহযোগীতা লাগলে আমাকে জানাবেন। এরপর একটা মুচলেকা নিয়ে এবং এ বিষয়ে খোঁজ খবর সবার দায়িত্বে চেয়ারম্যান সাহেব (যেহেতু তিনি স্বেচ্ছায় দায়িত্ব নিলেন) কে দিয়ে বিদায় নিলাম। ফেরার পথে সামাজিক অবক্ষয়ের কথা ভেবে মনটা বিষন্ন হয়ে গেলো। আর কানে বাজতে থাকলো একটা ১০-১১ বছরের বাচ্চার কন্ঠ...।
আমার বিয়া হইবো না ক্যান ?