একটি বাজারের আত্মকাহিনি

Client Logo
  • গল্প লিখেছেনঃ  মোহাম্মদ কাবিরুল ইসলাম খান
  • তারিখঃ 2017-04-19
  • ভিজিটঃ 2537
 
বাংলাদেশের “হোয়াইট গোল্ড” নামে পরিচিত চিংড়ি মাছ। মূলত দুই ধরনের চিংড়ি মাছ বাংলাদেশ হতে আন্তর্জাতিক বাজারে রপ্তানি করা হয়, তা হল গলদা ও বাগদা চিংড়ি। বিশ্বের প্রায় ৫৬টি দেশে চিংড়ি মাছ রপ্তানি করা হয়। চিংড়ি মাছের একটি বড় আংশ খুলনা-বাগেরহাট আঞ্চলে চাষ করা হয়। বর্তমানে কিছু আসাধু ব্যবসায়ীর জন্য এ সেক্টরটি হুমকির সম্মুক্ষীন। ঘটনাটির শুরু ২০১৫ সালের মে মাসে। আমি তখন বাগেরহাটের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। বাগেরহাট সদর উপজেলার চুকনগর ইউনিয়নে একটি বড় মাছের আড়ৎ রয়েছে। এলাকার কিছু সাংবাদিক আমাকে ফোনে তথ্য প্রদান করে কিছু আসাধু ব্যবসায়ী চিংড়ি মাছের মধ্যে সুজি প্রবেশ করে চিংড়ি মাছের ওজন বৃদ্ধি করে বাজারে বিক্রি করছে। ঘটনাটি শুনে আমি তো অবাক ! এ কিভাবে সম্ভব? আমি তখন চুকনগরে বসবাসরত আমার অফিসের এক কর্মচারী এবং সহকারী পরিচালক ভোক্তা অধিদপ্তর কাছে এ বিষয়টি জানতে চাই এবং তারা খুঁজ নিয়ে আমাকে এ বিষয়ে বিস্তারিত অবগত করে। আমি জানতে আরি কিছু লোক ইঞ্জেকশানের সিরিঞ্জ দিয়ে গরম পানির সাথে খাবার সুজি মিশিয়ে তা চিংড়ি মাছের ভিতরে প্রবেশ করে। সুজি ঠান্ডা হয়ে ব্যাপন প্রকৃয়ায় চিংড়ি মাছ হতে পানি বাহিরে চলে যায় রয়ে যায় শুধু সুজি, এতে চিংড়ি মাছের ওজন বেড়ে যায় কিন্তু সুজির সাদা রং এর জন্য বাহির থেকে কিছুই বুঝা যায় না। আমি আমাদের এই অশিক্ষিত, আর্ধ-শিক্ষিত লোকদের বুদ্ধি দেখে আবার অবাক হই। কিন্তু যতই অবাক হই একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হিসাবে আমার তো এ বিষয়টির প্রতিকার করতেই হবে। শুরু করি মোবাইল কোর্টের প্রস্তুতি। একদল চৌকশ পুলিশ কন্সটেবল ও সহকারী পরিচালক ভোক্তা অধিদপ্তর কে নিয়ে বের হই একদিন সকাল বেলা। সকাল আটটায় উপস্থিত হই চুকনগর বাজারে। বাজারে গিয়ে দেখি বাজার রমরমা, অনেক বেচাকেনা চলছে। শুরু করি অভিযান। প্রথম দুটি দোকানে কিছুই না পেয়ে মনে মনে খুশিই হই। কিন্তু খুব বেশিক্ষণ খুশি থাকতে পারি নাই। তৃতীয় দোকানে পেয়ে যাই এক আসাধু ব্যবসায়ীকে। সহকারী পরিচালক, ভোক্তা অধিদপ্তর আমাকে দেখায় কিভাবে মাছের ভিতর ইনঞ্জেকশান দিয়ে সুজি প্রবেশ করানো হয়েছে। স্থানীয় ক্রেতাদের কে বিষয়টি দেখাই এবং বুঝিয়ে দিই কি ভাবে তাদেরকে ঠকানো হচ্ছে। বিক্রেতার কাছে জানতে চাইলে সে অপরাধ স্বীকার করে এবং ক্ষমা প্রার্থনা করে। প্রথমবারের মত আপরাধ করায় সে আদালতের কাছে সঠিকভাবে ব্যবসা করার সুযোগ চায়। যেহেতু চুকনগরে এটাই প্রথম অভিযান তাই তাকে প্রথম বারের মত সুযোগ প্রদান করে ভোক্তা অধিকার ও সংরক্ষণ আইন-২০০৯ এর ৪১ ধারা মতে ৬০০০০/- (ষাট হাজার টাকা) জরিমানা প্রদান করা হয়, জরিমানা অনাদায়ে দশ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড প্রদান করা হয়। সুজি মিশ্রিত চিংড়ি মাছগুলিকে ধংস করার জন্য সহকারী পরিচালক ভোক্তা অধিদপ্তরকে আদেশ দেয়া হয়। ইতিমধ্যে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সহ এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ এবং সকল ব্যবসায়ী উপস্থিত হয়ে আদালতের কাছে তিন দিনের সময় চায়। উক্ত তিন দিনে তারা চুকনগরের সকল আড়ৎ হতে ভেজাল মাছ বিনষ্ঠ করে সঠিক ভাবে ব্যবসা করার প্রতিশ্রুতি প্রদান করে। আমার কাছে তাদের এই প্রস্তাব গ্রহনযোগ্য হওয়ায় তিন দিন পর পুনরায় আসব বলে মোবাইল কোর্ট সমাপ্ত করি। কিছুদিন পর আমি পুনরায় ঐ বাজারে যাই কিন্তু কোন অনিয়ম দৃষ্টিগোচর না হওয়ায় স্থানীয় ব্যবসায়ীদের ধন্যবাদ প্রদান করি।

 প্রিন্ট