দি ট্র্যাজেডি অব আ ম্যাজিস্ট্রেট
- গল্প লিখেছেনঃ মো:তারেক মাহমুদ
- তারিখঃ 2017-04-19
- ভিজিটঃ 2470
তখন আমি নওগাঁ কালেক্টরেটের প্রোবেশনার নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট । গ্রীষ্মের খরতাপে তপ্ত এক দুপুরে চৌকস পুলিশ ফোর্স আর পেশকার পিওন সম্যভিব্যাহারে বেরুলাম মোবাইল কোর্ট নিয়ে। লালসালু খচিত সাদা মাইক্রোবাসটায় বীর বিক্রমে তাজের মোড় এলাকায় এসে দেখি বুড়ো এক পান দোকানী আরামসে বসে চিবুচ্ছে পান; তার ছোট্ট দোকানের দুইপাশে এবং সামনে সাঁটানো সিগারেটের বিজ্ঞাপন। সিগারেটের বিজ্ঞাপন বন্ধে আমরা তখন জিরো টলারেন্স অবস্থানে। ফলে গাড়ি থামিয়ে পাকড়াও করা হল বুড়োকে। -"এইসব কি সাটিয়েছেন? " হুঙ্কার দিল ভয়ালদর্শন এক পুলিশ।বুড়ো কিন্তু নির্বিকার, পান চিবুতে চিবুতেই তিনি জবাব দিলেন- "কাগস"-"কাগস মানে ? এগুলোতো সিগারেটের বিজ্ঞাপন!"-"জ্বে, এইগুলা সিগেরেটের কাগস"-"আপনি জানেন না, সিগারেটের বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ?" -"জ্বে জানি" ্গ্রীক দার্শনিকের মত বিজ্ঞভঙ্গীতে মাথা নেড়ে বলে বুড়ো।এত সুন্দর স্বীকারোক্তির পর আর দেরি করা বাহুল্য। যথাবিহিত এবং যথাযথ আইনী প্রকৃয়া অনুসরণপূর্বক ৫০০/- টাকা জরিমানা করা হলো সক্রেটিসকে। বুড়ো কিন্তু এবার সত্যিই চমকে দিল আমাদের। চিলের মত ছোঁ মেরে জরিমানার স্লিপটা নিয়ে ফটাফট টাকা গুনে পেশকারের হাতে ধরিয়ে দিয়ে ফের সেই ধ্যানে বসে গেল সে। নেই কোন কাকুতি-মিনতি, নেই কোন আফসোস। তালি ছিন্ন ময়লা পাঞ্জাবি পরা হতদরিদ্র লোকটার নির্লিপ্ততায় হতভম্ব আমরা পুলিশ-ম্যাজিস্ট্রেট মুখ চাওয়াচাওয়ি করে যখন গাড়িতে ফিরে আসছি, তখন হঠাৎ নজরে পড়ল, কাছেই আরেকটি দোকানের দোকানী সেই বুড়োর দিকে তাকিয়ে 'অর্থপূর্ণ' হাসি বিনিময় করছে। বুঝলাম, কোন একটা ঘটনা আছে। তো সেদিনের মত সিগারেটের বিজ্ঞাপন নষ্ট করে কোর্ট সেরে ফিরে গেলাম আমি। ২/৩ দিন পর ছুটির বিকেলে হাটতে হাটতে গেলাম ওদিকে, দেখি সেই বুড়ো সেই তেমনি সিগারেটের বিজ্ঞাপন সাঁটিয়ে বসে পান চিবুচ্ছে। তো পাশের সেই দোকানটায় গিয়ে টুকটাক কেনাকাটার ছলে জিজ্ঞেস করলাম "আচ্ছা, ওই মুরুব্বির বিষয় কি , সেদিন জরিমানা করলাম, উনার তো গায়েই লাগল না..." উত্তরে দোকানী যা বলল, তাতে আমার পিলে চমকে যাবার উপক্রম;- সিগারেট কোম্পানীর এজেন্টদের ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে করা জরিমানার স্লিপ দিলেই তারা নাকি জরিমানার সমপরিমান টাকা দোকানীদের দিয়ে দেয়। মনেমনে খুব ক্ষেপে গেলাম আমি। কদিন পর ফের মোবাইল কোর্ট নিয়ে বেরিয়ে এবার ৪ ধারামতে গণহারে ৮/১০ টা সিগারেটের দোকানে ৩/৪ হাজার টাকা করে জরিমানা করে মনে মনে ভাবলাম 'দেখি এবারে সিগারেট কোম্পানীর এজেন্ট বাহাদুরেরা কি করে' ।বাহাদুরেরা অবশ্য আমারকে নিরাশ করেনি, পরদিনই এডিসি স্যারের কাছে ব্যবসায়ী সমিতি থেকে 'নালিশ' চলে আসে, আমি নাকি লঘু পাপে দরিদ্র ব্যবসায়ীদের উপর গুরুদন্ড দিচ্ছি, (ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা যে কাদের ইন্ধনে এতদূর আসতে সাহস করেছে তা বিজ্ঞ পাঠক নিজগুনে বুঝে নিবেন)। যথারীতি ডাক পড়ল আমার, এবং স্যারের প্রশ্নের জবাবে আমি পুরো বিষয়টা খুলে বললাম।আমার কথা শুনে স্যারের কপালে গভীর চিন্তার ভাঁজ পড়ল। -"আচ্ছা বুঝলাম সিগারেট কোম্পানীর এহেন আচরণের প্রেক্ষিতে জরিমানা না বাড়িয়ে চলবে না, কিন্তু তোমার কাছে কি প্রমান আছে, যে ওরা জরিমানার সমপরিমান টাকা দোকানীদের দিয়ে দেয় ?" স্যারের কথায় এবার আমার কপালেই গভীর চিন্তার ভাঁজ পড়ল -"জ্বি না স্যার, প্রমান পাইনি, তবে ... "-"দেখ, অকাট্য প্রমান ছাড়া দরিদ্র ব্যবসায়ীদের উপর এতটা জরিমানা একটু বেশিই হয়ে গেছে, ভবিষ্যতে ... ... ..."বিমর্ষ হয়ে বেরিয়ে এলাম স্যারের রুম থেকে। (পরবর্তী পর্বে সমাপ্য)