কারেন্ট জাল সন্ত্রাস

Client Logo
  • গল্প লিখেছেনঃ  মোঃ সাদি উর রহিম জাদিদ
  • তারিখঃ 2017-04-18
  • ভিজিটঃ 1623
 
পাহাড়ের সাথে হাওড় বাওরের অবস্থান প্রকৃতিতে বিরল। এ বিরল সৌন্দর্যের অধিকারী একমাত্র নেত্রকোণা জেলা।নেত্রকোণা জেলা নদী ও হাওড় বেষ্টিত । এর বুকচিড়ে বয়ে চর্তুদিক হতে উপজেলাগুলিকে জড়িয়ে আছে বিভিন্ন নদী ও হাওড়। নদী ও হাওড় গুলো সারা দেশব্যাপি মৎস্যের যোগান দেয়। ৬ এপ্রিল ২০১৫ সালে নেত্রকোণা জেলা  উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সাথে ভিডিও কনফারেন্স চলাকালে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মহাশোলের অভয়ারণ্য এ জেলাকে মৎস্যের অভয়াশ্রমে পরিণত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। লোকচক্ষুর অন্তরালে তারা অব্যাহত রাখে কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা নিধন।
             
বিগত ৩০-০৮-২০১৬ তারিখে সারাদিনের কর্মব্যস্ততার পরিসরে মধ্যাহ্ন ভোজ সেরে অফিসে স্থানীয় সরকার শাখায় বসে পত্রিকা পড়ছিলাম। এমন সময় নেজারত শাখার অফিস সহায়ক মাফিজ এসে বললো তার গ্রামের বাড়ি, বারহাট্টা উপজেলায় একজন স্বনামধন্য ব্যক্তি বিভিন্ন গৃহস্থলীর জিনিসপত্রের অন্তরালে অনেক দিন যাবৎ কারেন্ট জাল বিক্রি করে আসছেন। জাটকা নিধন রোধে তখন সারা দেশব্যাপী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। বিষয়টি আমি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্যার কে জানান দেই এবং মোবাইল কোর্ট অভিযান পরিচালনার কথা বলি। স্যার বিষয়টি বারহাট্টার উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যারকে জানান দিয়ে অভিযান পরিচালনার কথা বলেন। উপজেলা নির্বাহী অফিসার স্যার ফোনালাপে জানান তিনি উক্ত দোকানে ৩ মাস আগে একবার অভিযান করেন এবং গোটা কয়েক কারেন্ট জাল জব্দ করেন। স্যারের ভাষ্য অনুযায়ী লোকটা খুচরা বিক্রেতা। পরবর্তীতে আমি বিকেল ৪টায় নেত্রকোণা সদর ও বারহাট্টা উপজেলার সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জনাব শরিফুল হক আকন্দ ও প্রয়োজনীয় সংখ্যক পুলিশ ফোর্স নিয়ে উক্ত স্থানে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। উক্ত দোকানে গেলে কাশেম সাহেব (৬৫) নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে পরিচ্য় দেন এবং তিনি কারেন্ট জাল বিক্রি করা বন্ধ করে দিয়েছেন বলে জানান। তল্লাশীর এক পর্যায়ে দোকানের পেছন দিকে একটা দরজা আমাদের নজরে আসে। তিনি এটা তাঁর বাসায় যাওয়ার রাস্তা বলে জানান। এক পর্যায়ে তাকে জোরপূর্বকই দরজা খুলে দিতে বাধ্য করি। আমরা স্তব্দ হয়ে দেখি দরজার ওপাশে ১টি গুদাম ঘর যাতে প্রায় ১০ হাজার মিটার কারেন্ট জাল মজুদ করে রেখেছেন এলাকার স্বনামধন্য ব্যবসায়ী ও নিজেকে মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেয়া সেই কাশেম মিয়া। দোকানটি বাজারের মধ্যে হওয়ায় ইতোমধ্যে এলাকাবাসী জড়ো হোন। কাশেম মিয়ার এহেন নিকৃষ্ট কর্মে তারা হতবাক হয়ে যান। এলাকার গণ্যমান্য কিছু ব্যক্তি শাস্তির ক্ষেত্রে তাঁর সুনাম ও বয়স সুনজরে আনার আহ্বান জানান। সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জনাব শরিফুল হক আকন্দ জানান জব্দকৃত আনুমানিক ৫০ কেজি কারেন্ট জালের বাজার মুল্য প্রায় ৩ লক্ষাধিক টাকা। কাশেম মিয়া তাঁর এরূপ কর্মে লজ্জিত হোন এবং অপরাধ স্বীকার করেন। মৎস্য সংরক্ষণ আইন ১৯৫০ অনুযায়ী যেহেতু কারাদন্ডের প্রতি জোর দেয়া হয়েছে সেহেতু কাশেম মিয়ার সুনাম ও বয়সের কথা ভেবে তাকে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ অনুযায়ী  ৫০,০০০ (পঞ্চাশ হাজার) টাকা অর্থদন্ডে দণ্ডিত করি এবং জব্দ কৃত কারেন্ট জাল সকলের উপস্থিতিতে ধ্বংস করা হয়।

 প্রিন্ট