পানির অপর নাম মরণ (!)
- গল্প লিখেছেনঃ মো: মাজহারুল ইসলাম
- তারিখঃ 2017-04-18
- ভিজিটঃ 1842
পানির অপর নাম মরণ (!)
যে পানির
অপর নাম জীবন, সে পানি আবার মৃত্যুর কারণ কী করে হয় ! আজ সেই গল্প(!!) বলব।
ঘটনাটি ২০১৬ সালের কোনো এক গ্রীষ্ম দিনের। বরাবরের মত সকাল ৯ টায় গোপালগঞ্জ জেলার
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট তাঁর অফিস কক্ষে কর্মকর্তাদের নিয়ে দিনের সূচনা বৈঠক
করছেন। তখন 'বর্তমান গোপালগঞ্জ' নামক একটি স্থানীয় দৈনিক পত্রিকার ঐ দিনের শিরোনামে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের চোখ
আটকে যায়। পত্রিকার শিরোনাম ছিল " মিনারেল ওয়াটারের নামে এ কী খাচ্ছে
গোপালগঞ্জবাসী'' । গোপালগঞ্জ শহরে বিশুদ্ধ প্রাকৃতিক খাবার পানির সংকট রয়েছে। এই
সুযোগে গড়ে উঠেছে অসংখ্য বিশুদ্ধ খাবার পানি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। এদের অধিকাংশই
কোনো রকম নিয়ম না মেনেই ব্যবসা করছে। এই পানির
ক্রেতা শহরের অধিকাংশ বাসিন্দা, সরকারি-বেসরকারি- স্বায়ত্তশাসিত অফিসসমূহ, শিক্ষা
প্রতিষ্ঠানসমূহ , হোটেল, রেস্তুরেন্টসমূহ থেকে ছোটো চা দোকান পর্যন্ত ।পানি বিশুদ্ধকরণ কারখানা স্থাপনের জন্য বিএসটিআই এর অনুমোদন, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি স্থাপন ব্যতিরেকে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ট্যাংকির পানি প্লাস্টিকের জার কিংবা বিভিন্ন পাত্রে করে সরবরাহ করা হয়। এভাবে সরবরাহকৃত পানি পরবর্তীতে পরিক্ষা করে দেখা গেছে যে এই পানি জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ । অতিরিক্ত মুনাফালোভী একটি চক্র এভাবে মানুষের সাথে প্রতারণা করে
অবৈধ ব্যবসা করছে।
জেলা
ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়ের নির্দেশ অনুযায়ী
ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার জন্য আদেশপ্রাপ্ত হয়ে ঐদিন বিএসটিআই এর পরিদর্শক এর সাথে
যোগাযোগ করি। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মহোদয়ের পরামর্শ নিয়ে বিএসটিআই এর
প্রতিনিধি, পুলিশ ফোরস এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের
অভিযান পরিচালনা করি। ঐদিন শহরের তিনটি পানির কারখানায় অভিযান পরিচালনা করি। এদের
মধ্যে একটি কারখানারও বিএসটিআই এর অনুমোদন নেই, পানি বিশুদ্ধকরণের মেশিনগুলোও মানসম্পন্ন
নয়, বিশুদ্ধপানির উপাদানসমূহ পরীক্ষা করার মেশিন নেই, পানির জারে অবৈধ লেবেল
লাগানো হচ্ছে, অধিকন্তু নোংরা পরিবেশে ট্যাংকি থেকে সরাসরি পানি পাত্রজাত করা হচ্ছে ! সবথেকে আশংকার বিষয় ছিল পানি বিশুদ্ধকরণের নামে এই কারখানাগুলো আসলে
পৌরসভার সরবরাহ করা পানি জারে ভরে
বাজারজাত করত। ভোক্তা সাধারণের সাথে প্রতারণার এমন ভায়াবহতা আমাদেরকে হতবাক
করে দেয়। এই ঘটনা যে সব সাধারণ মানুষ প্রত্যক্ষ করছিল তা্রাও ঘটনার আকস্মিকতায়
হতবাক হয়ে যায়। তারা এই প্রতারক ব্যবসায়ীদের দৃষ্টান্ত মূলক শাস্তি দাবী করে।
তিনটি
কারখানাকেই ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯ এ ৫০০০০ ( পঞ্চাশ হাজার টাকা ) পরিমাণ জরিমানা করা হয় এবং কারখানার মালিকগণ তাদের ভুল স্বীকার করে আইন অনুযায়ী সকল শর্ত না মানা পর্যন্ত তাদের কারখানা বন্ধ রাখার ঘোষনা দেন। এই অভিযানের খবর ছড়িয়ে পরলে ভুক্তভোগী মানুষের মধ্যে সচেতনতা তৈরী হয়।