“স্যার, আমরা এখন আর নোংরাভাবে মিষ্টি বানাই না”
- গল্প লিখেছেনঃ ইলিশায় রিছিল
- তারিখঃ 2017-04-18
- ভিজিটঃ 2210
বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলের মতো
নোয়াখালীর লোকজনও পারিবারিক, সামাজিক, দাপ্তরিক নানাভাবে অতিথি আপ্যায়নে প্রধান
উপকরণ হিসেবে ব্যবহার করেন নানা স্বাদের মিষ্টি। আহা সেই মিষ্টি! সময়টা ২০১৬ সাল। নোয়াখালীর
সোনাপুর চৌরাস্তা জেলাটির জিরো পয়েন্ট। এখানে দেশ সেরা নানা ব্র্যান্ড ও স্থানীয়
ব্র্যান্ডের বাহারি মিষ্টি দোকান/শো-রুম আছে। দোকানগুলোতে জিভে জল এসে যাওয়া হরেক
রকমের মিষ্টি থরে থরে সাজানো। স্থানীয় নাগরিকদের কাছ থেকে প্রাপ্ত বিভিন্ন তথ্যের
ভিত্তিতে ডিসি স্যার (জনাব বদরে মুনির ফেরদৌস) এর নির্দেশে একদিন সোনাপুর জিরো
পয়েন্টে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। এখানে বনফুল, ফুলকলি সহ স্থানীয় আরও অনেক
ব্র্যান্ডের দোকানগুলোতে মোবাইল কোর্ট করি। সবকিছু দেখে তো আমাদের সবার চোখ
ছানাবড়া! এ কী! কী হচ্ছে এসব! বাহারি স্বাদের মিষ্টিগুলো যেভাবে তৈরি হয় তা দেখলে
সব স্বাদ মুহূর্তের মধ্যে কর্পূরের মতো উবে যাবে! নোংরা, অস্বাস্থ্যকর, বিচ্ছিরি
পরিবেশে তৈরি হচ্ছে আমাদের স্বাদের মিষ্টি! ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এ বেশ
কয়েকটি দোকানকে জরিমানা করা হল। নোংরা, পঁচা মিষ্টিগুলো ধ্বংস করা হল। কিন্তু
জরিমানা করাই কি সব? উপস্থিত লোকজনদেরকে দেখানো হল মিষ্টি তৈরির প্রক্রিয়া।
উপস্থিত জনতা বিস্মিত হল। পরে সবার উদ্দেশ্যে সচেতন হওয়ার জন্য অনুরোধ জানাই।
দোকান মালিক ও কর্মচারীদেরকে আহবান জানাই যেনো তারা এভাবে নোংরা পরিবেশে
খাদ্যদ্রব্য তৈরি না করেন। কারণ এ মিষ্টি তো তার নিজের সন্তানও খেতে পারে! দোকান
মালিক ও কর্মচারীরা ওয়াদা করল তারা আর এভাবে নোংরা পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য তৈরি করবে
না।
এর দু’সপ্তাহ পরে আবারো সোনাপুরে
মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। ও মা! এ দেখি অনেক পরিবর্তন! দোকানে ঢোকার আগেই
দোকানের কর্মচারীরা বলছিল, “স্যার, আমরা এখন আর নোংরাভাবে মিষ্টি বানাই না”। তাই
তো! ভিতরে গিয়ে দেখি আগের চাইতে অনেক বেশী পরিস্কার। এ যেনো ভানুমতির খেল! পরে
সবাইকে আন্তরিক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানিয়ে চলে আসি। আশার পথে গাড়িতে বসে মনে হল
এভাবে সবাই যদি পরিবর্তন হয় তাহলে দেশটা সত্যি সোনার বাংলাদেশ হতে খুব বেশী দেরী
লাগবে না!