ঈদের আনন্দ হোক ভেজালমুক্ত খাদ্যের সাথে
- গল্প লিখেছেনঃ সাবরিনা আফরিন মুস্তাফা
- তারিখঃ 2017-04-18
- ভিজিটঃ 2200
বাঙ্গালী মুসলমানদের জীবনে ঈদ হলো সবচেয়ে বড়
উৎসব। তবে ঈদ-উল-ফিতরের আমেজ শুরু হয়ে যায় রমজান শুরু হওয়ার সাথে সাথেই। তাই বিশেষ
করে রমজানে ভেজাল্মুক্ত স্বাস্থ্যকর খাদ্য
নিশ্চিতকরণের জন্য সরকার প্রত্যেক বছরই ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে থাকে।
প্রতি বছরের মত রমজানে ও আসন্ন ঈদুল ফিতরের সময়
স্থানীয় জনগনের কাছে ভেজালমুক্ত স্বাস্থ্যকর খাদ্য পৌছানো নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সরকারি
নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা প্রশাসন, ঝালকাঠি কর্তৃক অধিক সংখ্যক ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার
লক্ষ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। বিশেষ করে যে সকল খাদ্যদ্রব্যের চাহিদা রমজান ও ঈদ
উপলক্ষ্যে বৃদ্ধি পায়, যেমন- সেমাই, লাচ্ছি, গুঁড়া দুধ, চিনি ইত্যাদি তৈরীর কারখানা,
ফলের দোকান, মুদি দোকান, কোল্ড স্টোরেজ ইত্যাদি স্থানে অধিকহারে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা
করা হয়।
এ কার্যক্রমের
অংশ হিসেবে বি এস টি আই এর সংশ্লিষ্ট ইন্সপেক্টরের উপস্থিতিতে জেলার বিভিন্ন স্থানে
বি এস টি আই এর অনুমোদনহীন, অস্বাস্থ্যকর ও দূষিত পরিবেশে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনকারী
কারখানাগুলোতে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার পরিকল্পনা করি এবং ৫ জুন ২০১৬ তারিখ
রবিবার ঝালকাঠি জেলার সদর উপজেলার মনোহরপট্টি নামক স্থানে ভ্রাম্যমান আদালত
পরিচালনা করি। উক্ত স্থানে গিয়ে দেখি বি এস টি আই এর অনুমোদনহীন একটি সেমাই
কারখানা যারা অত্যন্ত নোংরা ও দূষিত পরিবেশে লাচ্ছা সেমাই উৎপাদন করছে এবং বাজারে প্রচলিত ‘কুলসন সেমাই’ এর মোড়ক বা
প্যাকেট হুবহু নকল করে ‘কুলসুম সেমাই’ নামে লাচ্ছা সেমাই বাজারজাত করছে। কারখানার
মালিককে এ বিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে তিনি প্রথমে জানান যে, তিনি বি এস টি আই
কর্তৃপক্ষের কাছে অনেকদিন আগে আবেদন করেছেন কিন্তু কোন অনুমোদন পাননি।
তার কাছে এ
সংক্রান্ত কাগজপত্র দেখতে চাইলে তিনি দেখাতে ব্যর্থ হন। পরবর্তীতে তার ভাষ্যমতে বি
এস টি আই এর ইন্সপেক্টর তার দপ্তরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন যে, উক্ত মালিকের নামে
কোন আবেদন করা হয়নি। এ বিষয়টির উদ্ধৃতি দিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে কারখানাটির
মালিক স্বীকার করে নেন যে, তিনি বি এস টি আই এর অনুমোদন না নিয়েই এই সেমাই
কারখানাটি পরিচালনা করছেন এবং বাজারে প্রচলিত একটি লাচ্ছা সেমাই এর মোড়ক নকল করে
এই ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
বি এস টি আই এর
ইন্সপেক্টর তার এই অপরাধের প্রেক্ষিতে আমার কাছে প্রসিকিউশন দেন এবং আমি অভিযোগ
আমলে গ্রহণ করি। অভিযুক্ত মালিক তার দোষ স্বীকার করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। দুইজন
সাক্ষী অভিযোগ সমর্থন করে সাক্ষ্য প্রদান করেন। বি এস টি আই এর অনুমোদন ব্যতীত কারখানায়
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই উৎপাদন এবং অন্য আরেকটি পণ্যের মোড়ক নকল করে সেমাই
বাজারজাত করার অপরাধে কারখানাটির মালিককে ১০০০০ টাকা জরিমানা করি এবং নকল সেমাই
জব্দ করি। প্রসিকিউশন প্রদানকারীকে জব্দকৃত মালামাল ধ্বংসের আদেশ দেই।
সবচেয়ে বড় কথা
হলো, রমজানে বা ঈদে জনস্বাস্থ্যের উপর হুমকিস্বরূপ
খাদ্য কারো কাম্য হতে পারেনা। স্বাস্থ্যকর খাবার খাবো, সুস্থ থাকবো, নতুন
প্রজন্মের জন্য স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ নিশ্চিত করবো-এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।