আহারে পাহাড়


- গল্প লিখেছেনঃ চৈতী সর্ববিদ্যা
- তারিখঃ 2017-04-18
- ভিজিটঃ 1923
অসংখ্য পাহাড়ে ঘেরা একটি জেলা বান্দরবান পার্বত্য জেলা। কিন্তু মানুষের
লোভাতুর দৃষ্টির কারণে সেই পাহাড় আজ ধ্বংসের মুখে। মানুষ বুঝে না বুঝে প্রতিনিয়ত ধ্বংস করে চলেছে এই পাহাড়। এমনই একদিন ২৮ আগস্ট ২০১৬, সময় দুপুর ১.০০ টা। কার্যালয়ে নিজ কক্ষে
বসে নথি দেখছিলাম। এমন সময় বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্যার ডেকে পাঠালেন। স্যারের
রুমে ঢোকা মাত্রই স্যার বললেন ‘এক্ষুণি বড়ুয়ারটেক যাও, ওখানে অবৈধভাবে পাহাড় কাটা
হচ্ছে বলে খবর এসেছে’। স্যারের রুমে বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্যারও উপস্থিত
ছিলেন। তিনি প্রয়োজনীয় সকল তথ্য দিলেন। স্যারের রুম থেকে বেরিয়ে প্রয়োজনীয়
সংখ্যক পুলিশ সদস্য এবং পেশকার ও একজন অফিস সহায়ক নিয়ে বড়ুয়ারটেক এর উদ্দেশ্যে
রওনা দিলাম। আনুমানিক ২.০০ টায় পৌঁছে গেলাম বান্দরবান সদর উপজেলাধীন বড়ুয়ারটেক
এলাকায়।
ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখলাম বড়ুয়ারটেক বৌদ্ধ মন্দিরের পাশে পাহাড়ের গা ঘেঁষে
রয়েছে একটি বাড়ি। বাড়ির মালিক বিমল বড়ুয়া তাঁর স্ত্রী-সন্তানসহ থাকেন ঐ বাড়িতে।
পাহাড়টিতে বিমল বড়ুয়ার কোনো মালিকানা নেই। পাহাড়ের যে দিকটি তারঁ বাড়ির পেছনে
অবস্থিত সে দিকের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কেটে ফেলা হয়েছে দেখতে পাই এবং বিমল বড়ুয়ার
বাড়ির সামনে কেটে আনা মাটি ও মাটি কাটার কোদাল, কাটা মাটি বহন করে আনার ঝুড়ি
প্রভৃতি দেখতে পাই। বিমল বড়ুয়া স্ত্রী-সন্তানসহ বাড়িতেই ছিলেন এবং দুপুরের খাবার গ্রহণ
করছিলেন। বড়ুয়ারটেক মন্দিরে সেদিন
ধর্মানুষ্ঠান চলছিল বিধায় ঐ এলাকায় প্রচুর
লোকসমাগম ছিল। স্থানীয় লোকজনের উপস্থিতিতে বিমল বড়ুয়াকে ডাকা হলে তিনি বাড়ির বাইরে
আসেন এবং পাহাড় কাটার কথা স্বীকার করেন। বাড়ির চারপাশ উঁচু করার জন্য স্ত্রী ও
সন্তানদেরকে সাথে নিয়ে ঐদিন সকাল থেকে পাহাড় থেকে মাটি কেটে আনছিলেন বলে আদালতকে
জানান তিনি।
এমতাবস্থায় বিনানুমতিতে পাহাড় কাটার উপর নিষেধাজ্ঞা থাকার বিষয়টি তাঁকে
বুঝিয়ে বলা হয় এবং উপস্থিত সকলকে পরিবেশের স্বার্থে পাহাড় রক্ষা করার প্রয়োজনীয়তা
বুঝানো হয় যাতে সকলেই বিষয়টির গুরুত্ব অনুধাবন করেন ও সচেতন হন। উপস্থিত সকলেই
আসামীর প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করেন ও তাঁকে তিরস্কার করেন।
আসামী তাঁর ভুল বুঝতে পেরে অনুতপ্ত হন এবং ভবিষ্যতে আর কখনো পাহাড়ের
ক্ষতিসাধন করবেন না বলে আদালতকে জানান। অতঃপর মোবাইল কোর্ট আইন, ২০০৯ অনুযায়ী আসামীকে
ইমারত নির্মাণ আইন, ১৯৫২ এর ৩গ (পাহাড় কাটা ইত্যাদির উপর বিধি নিষেধ) ধারা লঙ্ঘনের
অভিযোগে ২০০০/- অর্থদণ্ড ও অর্থদণ্ড অনাদায়ে ০৭ দিনের বিনাশ্রম কারাদণ্ড প্রদান
করি।
আসামীকে শাস্তি প্রদান শেষে যখন ফিরছিলাম তখন স্থানীয় লোকজন পাহাড়
রক্ষা করার গুরুত্ব সম্পর্কে এতদিন সচেতন ছিলেন না বলে আদালতকে জানান এবং ভবিষ্যতে
ঐ এলাকায় যাতে আর এভাবে পাহাড় কাটা না হয় সে বিষয়ে খেয়াল রাখবেন বলে প্রতিশ্রুতি
দেন। ঐ এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে সৃষ্ট এই সচেতনতাই ছিল এই মোবাইল কোর্টের সবচেয়ে
বড় সাফল্য। পরবর্তিতে যতবারই ঐ এলাকায় গিয়েছি , পাহাড়ের আর কোনো অংশে কাটা চিহ্ন
দেখতে পাইনি। এভাবেই বান্দরবান পার্বত্য জেলায় অনুমোদনবিহীন পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে মোবাইল
কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে পাহাড়কে মানুষের আহারে পরিণত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করার
চেষ্টা করা হচ্ছে।
