কে বেশী নিরাপদ? ম্যাজিস্ট্রেট না আসামি!


- গল্প লিখেছেনঃ মোঃ মাহবুবুল হক
- তারিখঃ 2017-04-18
- ভিজিটঃ 2271
এডমিন সার্ভিসে আমার বয়স তখন পাঁচ কি ছয় মাস। জেলা প্রশাসক মহোদয় সদ্য মোবাইল কোর্টের অধিক্ষেত্র নির্ধারণ করে দিয়েছেন। রাত দশটার দিকে বাসায় ফিরে খেতে বসেছি। এমন সময় এডিএম স্যারের কল। রাত ১১:০০ টায় প্রস্তুত থাকতে হবে। বিজিবি তাদের গোয়েন্দা বিভাগের তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে বের হবে। পুলিশও থাকবে তবে সেখানেও যোগাযোগ করবে বিজিবি। মনে মনে ভাবলাম এটা মোবাইল কোর্ট নয়, অনাকাংক্ষিত পরিস্থিতিতে আমাকে ব্যবহার করা। এডিএম স্যারের নির্দেশনা মোতাবেক গাড়িতে বসে থাকা ছাড়া আমার কোন কাজ নাই।রাত ১টার দিকে সিও বিজিবি কল দিলেন। ভদ্রলোক যাবেননা, তবে অভিযান সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া গেল। প্রথম স্পটে যাওয়ার পরে দেখলাম অনেকদুর হেটে যেতে হবে। বিজিবির দুই জনকে আমার সাথে নিয়ে নামলাম। কিছুদুর পরে আখ ক্ষেতের শুরু। মনে হচ্ছে শুরু আছে শেষ নেই। তিনটা টিমে ভাগ হয়ে তিন দিক থেকে আখ ক্ষেতের আইল ধরে হাটছে সবাই। তবে সবার মতো আমার বুট পরা নেই। শাঁপ-পোঁকা যাই থাকুক, পাড়া না দিলেই হলো, এই নীতিতে টর্চের আলোয় এগোতে হলো। হঠাৎ সবাই দৌড়। আমি দৌড় না দিয়ে আমার সাথের দুজনকে আমার সাথে থাকতে বললাম। হেটে হেটে স্পটে গিয়ে দেখলাম শত শত ফেন্সিডিলের খালি বোতল। যারা ওখানে ব্যবসা করে তারা কেউ নেই, অভিযান ব্যর্থ।দ্বিতীয় স্পট। শহরের মধ্যেই একটি বাসা। এবার আমিই ফোন দিয়ে পুলিশের টহল টিম আসতে বললাম। পুলিশ আসার আগেই অভিযান প্রায় শেষ। একজন মাদক ব্যবসায়ীর ঘরের চালের মধ্যে লুকানো একটি ফেন্সিডিলের বোতল। তার বাসার কোথাও আরো ফেন্সিডিলের বোতল আছে, তবে আমরা তার সন্ধান পাইনি। কোন অর্ডার সিট ছাড়াই আসামীকে এএসআই সাহেবের জিম্মায় দিয়ে, নিয়মিত মামলা দায়েরের মৌখিক আদেশ দিয়ে ভোর ৪টার দিকে বাসায় এলাম। ডিসি স্যার এডিএম স্যারকে ম্যাসেজ দিয়ে ঘুমালাম।সকালে অফিসে গিয়ে ভাবলাম একটু খোঁজ নিই। থানার ওসি সাহেবকে ফোন দিয়ে শুনলাম, মামলা দায়ের হয়েছে। গল্পে গল্পে আখক্ষেতের কথা শুনে ওসি সাহেব আঁতকে উঠলেন। “ওই জায়গা আপনার যাওয়া ঠিক হয়নি স্যার, আসামি পেলে নিশ্চিত গোলাগুলি হতো। গতবছর থানার সব ফোর্স নিয়েও আমরা পারিনি স্যার।” নতুন ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ভয় পেয়ে যাওয়ার মতো আরো অনেক কথাই শুনলাম। নিজের মধ্যে অনিরাপদবোধ আসতে না দিয়ে অভিজ্ঞতা হিসাবে নিলাম।চার-পাঁচ মাস পর, তখন আমি কাজে কিছুটা পরিণত কারন একই বাসায়, একই আসামি, তবে এবার ১৫০ এম্পল বুপ্রেনরফিন ইন্জেকশন সহ আটক করলাম। জিজ্ঞাসা করার পর সহজেই সব স্বীকার করলো, কত টাকা করে কেনা, কোথা থেকে কেনা, কত টাকা করে বিক্রয়, কাদের কাছে বিক্রয়, সবই খুব সহজেই বললো। তার চেহারায় আমি ভয় না, বিরক্ত দেখতে পেলাম। আমি বললাম “আপনি ছাড়া পেলেন কিভাবে? আপনাকেতো আমি ফেন্সিডিলসহ ধরেছিলাম!” প্রশ্নটা করে আমার মনে হলো এটা জিজ্ঞাসা করা ঠিক হলো না। কেন যেন মাদকসহ হাতেনাতে ধরা পড়ার পরও তার কোন ভীতি নেই। আমার নিজেকে একটু অসহায় মনে হলো। ভিডিও বন্ধ করে, আসামিকে অফিসে আনলাম। অর্ডার সিটে সব লিখলাম, আমার মুঠোফোনে ভিডিও করা হয়েছে, তাও লিখলাম। আবার এই আদালতের এখতিয়ার না থাকায়, নিয়মিত মামলা দায়েরের আদেশ দিয়ে পাঠিয়ে দিলাম।কিন্তু আসামি নাকি আবার বের হয়ে গেছে। আবার নাকি মাদক ব্যবসা করছে। হয়তো জামিনে আছে। কিন্তু আমার জামিন কে দিবে? আমিও জামিন চাই। নিজেদের জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করেও এসব মাদক ব্যবসায়ীদের হাসির পাত্র হতে চাইনা।
