সুস্থ মন, উৎকর্ষ বিনোদন...... সাতরঙ্গে রাঙ্গাবে আমাদের ভূবন


- গল্প লিখেছেনঃ মো: আজগর হোসেন
- তারিখঃ 2017-04-18
- ভিজিটঃ 1835
সামাজিক অপরাধ রোধে জেলা প্রশাসন, পাবনার ধারাবাহিক অভিযান
তখন সাফল্যের চূড়ায়। জনমনে বইছিল স্বস্তির সুবাতাস। সামাজিক অপরাধের নানান চিত্র
তুলে ধরে ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা নিয়ে প্রতিদিন জেলা প্রশাসকের দপ্তরে পদচারণা ঘটে
সর্বস্তরের মানুষের। আমিও তখন সেই দুঃসাহসী জেলা প্রশাসকের দলের একজন সাধারণ
সদস্য। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আমরা সাধারণ মানুষের সকল সমস্যা আমলে
নিয়ে নির্ধারিত সমাধানের ব্যবস্থা করতাম। এমনই একদিন একজন সচেতন নাগরিক অভিযোগ
করলেন, শহরের মনসুরিয়া কলেজ প্রাঙ্গনে বিজয় মেলার নামে চলছে অশ্লীল বিনোদন আর
মাইকে বাজছে উপদ্রব সৃষ্টিকারী বাজনা। অভিযোগ আমলে নিয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের
তাৎক্ষণিক নির্দেশনামতে পুলিশ ও র্যাব এর সহযোগীতা নিয়ে ছুটে যাই ঘটনাস্থলে।
অভিযোগের সাথে মিলে যায় বাস্তবচিত্র। ঘটনাস্থল থেকে অনুরোধক্রমে মেলার পরিচালককে
সাথে নিয়ে ফিরলাম জেলা প্রশাসকের দপ্তরে। জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট পরীক্ষা চলমান
থাকায় এবং মহান বিজয়ের মাস হওয়ায় জেলা প্রশাসক মহোদয় বিজয় মেলা পরিচালনা কমিটিকে
লিখিতভাবে এমন কার্যক্রম পরিচালনা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান এবং পুনরায় এমন
আদেশের লঙ্ঘনে উপযুক্ত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন মর্মে সতর্ক করেন।
দিন যায়, আর সতর্কতার এহেন বাণী নীরবে পথ হারায়। অর্থলোভে
পথভ্রষ্ট হলো আয়োজকদের বিবেক। লঙ্ঘিত হলো গণউপদ্রব বন্ধের নির্দেশনা, দিশাহীন রূপ
নিল বিজয় মেলার নামে অশ্লীল মেলার আয়োজন। প্রশাসন এবার দৃঢ়প্রতিজ্ঞবদ্ধ, এই
অপতৎপরতা রুখতে। আয়োজনের সাথে জড়িত সকল দুস্কৃতিকারীদের হাতেনাতে ধরার নিখুত পরিকল্পনা
করা হলো। বিপুল সংখ্যক পুলিশ, ডিবি পুলিশ, র্যাব এবং আনসার বাহিনীকে সাথে নিয়ে
আকা হলো অপরাধীদের আটক করার ছক। মেলাকে কেন্দ্র করে পাবনা শহরের মোড়ে মোড়ে
অবৈধভাবে র্যাফেল ড্রয়ের টিকিট বিক্রিরত অবস্থায় চারজন অভিযুক্তকে ছদ্মবেশে আটক
করা হলো। জব্দ করা হলো তাদের টিকিট এবং টিকিট বিক্রয়লব্ধ অর্থ। অতঃপর সঙ্গীয়
ফোর্সসহ দ্রুত এগিয়ে যাই নির্ধারিত ঘটনাস্থলে। অশ্লীল নৃত্যমঞ্চ থেকে আটক করা হয়
দুই নর্তকী এবং সেইসাথে আটক করা হয় মেলা আয়োজনের সাথে সংশ্লিষ্ট দুই ব্যবস্থাপক
এবং পরিচালককে। আমার সামনেই অপরাধ উদঘাটিত হওয়ায় অপরাধ আমলে নিয়ে পরবর্তীতে যে কোন
ধরনের অনাকাঙ্খিত সংঘর্ষ বা বিশৃঙ্খলা এড়াতে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে নিরাপদ
দুরত্বে অবস্থান করি। নর্তকীদ্বয়কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেলো তারা নিতান্তই দরিদ্র
পরিবার থেকে আগত এবং জেলার চাটমোহর উপজেলার বাসিন্দা। আবার দুজনই ১৮ বছরের অনুর্ধ
এবং কলেজ পড়ুয়া ছাত্রী। সামগ্রিক বিবেচনায়, দুই নর্তকীর পরিবারের অভিভাবককে ডেকে
পাঠানো হলো এবং অভিভাবকদের উপস্থিতিতে মুচলেকা নিয়ে দুইজনকে অভিযোগ হতে অব্যাহতি
দেয়া হলো। অন্যদিকে, মেলা আয়োজনের দুই ব্যবস্থাপক রুহুল কবির (৩৯), আব্দুল মালেক (৪২)
এবং পরিচালক ছগির মিয়ার (৪৬) বিচার প্রক্রিয়াও শুরু হলো। এরই মধ্যে উল্লিখিত তিন
অভিযুক্তের মুক্তির জন্য শুরু হয়ে গেলো রাজনৈতিক উচ্চমহলের তদবির। চমৎকার দক্ষতার
সাথে পুরো রাজনৈতিক মহলের চাপকে সামাল দিলেন সম্মানিত জেলা প্রশাসক। আর আমাকে
আশ্বস্ত করলেন নির্বিঘ্নে স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে।
অতঃপর, উল্লিখিত তিন ব্যাক্তিকে দন্ডবিধির ২৯১ ধারায় “গণ উপদ্রব বন্ধ করার
নির্দেশপ্রদানের পরও অব্যাহত রাখা” র দায়ে অভিযুক্ত করে প্রত্যেককে আলাদা
আলাদাভাবে ১৫ দিনের বিনাশ্রম কারাদন্ড এবং প্রত্যেককে আলাদাভাবে ২,০০,০০০/- (দুই
লক্ষ টাকা মাত্র) করে অর্থদন্ড আরোপ করা হলো। মুহূর্তেই স্তিমিত হলো অশ্লীল বিনোদনের
সব আয়োজন। দূর হলো প্রতাপশালীদের অবমাননার দীর্ঘশ্বাস। প্রাণফিরে এলো শহরের
স্বাভাবিক চলাচলে। এমন দোর্দন্ড প্রতাপের খবর ছড়িয়ে পড়লো জেলার সর্বত্র। আপাতত, আর
কোন অভিযোগ নয়, অভিনন্দনের বার্তা নিয়ে আমাদের দপ্তরে আসতে লাগলো সাংবাদিক,
মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে অভিভাবক, ব্যবসায়ী পর্যন্ত সর্বস্তরের মানুষ। এ যেনো
এক অঘোষিত বিজয়। এ যেনো আগামীর জন্য এক নিখুত দৃষ্টান্ত। পুরো বিচারপ্রক্রিয়া
সমাপ্ত করে যখন ফিরছিলাম আপন গন্তব্যে, তখনই মনে হলো সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এভাবেইতো
বদলাবে আমাদের সমাজ, আমাদের চাহিদা। আর তখনই মনের অজান্তে গাইলাম “আমরা যদি না জাগি
মা কেমনে সকাল হবে"
