মানসম্মত খাবার, ভোক্তার অধিকার
- গল্প লিখেছেনঃ জেপি দেওয়ান
- তারিখঃ 2017-04-17
- ভিজিটঃ 1794
মৌলভীবাজার
জেলার সদর উপজেলার শেরপুর একটি বিভিন্ন
দিক থেকে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি স্থান।
দূর- দূরান্ত থেকে বিভিন্ন কাজে এখানে প্রতিদিন শত শত মানুষের আগমন ঘটে। কয়েকদিন
যাবত স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করতে থাকেন যে এখানকার রেস্টুরেন্টগুলোতে খুবই নিম্নমানের
এবং পঁচা খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। এসব খাবার খেয়ে লোকজন ডায়রিয়া, আমাশয়, ভেদবমি প্রভৃতি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
ভুক্তভোগী কয়েকজন নাগরিক জেলা প্রশাসনের ফেসবুক পেজে এ
ব্যাপারে আশু পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট দাবি জানান। বিষয়টি জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের দৃষ্টিগোচর হলে তিনি আমাকে
সংশ্লিষ্ট এলাকায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার জন্য নির্দেশ দেন।
এমতাবস্থায় গত ২৬/১০/২০১৬ খ্রিস্টাব্দ তারিখে আমি ঐ এলাকার
রেস্টুরেন্টগুলোতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করি। মোবাইল কোর্ট পরিচালনাকালে দেখা যায়
অধিকাংশ রেস্টুরেন্টের মেঝের স্যাঁতস্যাঁতে অবস্থা, রান্নাঘরের পাশে খোলা টয়লেট,
বহু দিনের পুরনো পেঁয়াজ- রসুন বাটা খোলা অবস্থায় রাখা, যত্রতত্র মাছি উড়াউড়ি করছে এবং পাশে কুকুর- ছাগল ঘুরঘুর করছে। অধিকাংশ রেস্টুরেন্টে
ভোজ্যতেলের পরিবর্তে পাম অয়েল ব্যবহার করা হচ্ছে যা খুবই বিষাক্ত। আমি ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক জনাব আল আমিন-কে নিয়ে বিভিন্ন হোটেল ও রেস্টুরেন্টের খাবারের মান,
পরিবেশ ও উপাদান খতিয়ে দেখলাম। খাবারের মান ও পরিবেশ আশানুরূপ না
থাকায় হোটেল ও রেস্টুরেন্টের মালিকদেরকে বিভিন্ন পরিমাণ
অর্থদন্ডে দন্ডিত করি। জরিমানার পাশাপাশি তাদেরকে মানসম্মত
খাবারের বাধ্যবাধকতা ও প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে অবহিত করা হয়। তাছাড়া, পরিস্থিতির
উন্নতি না হলে ঘন ঘন মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে এবং অধিকতর কঠিন শাস্তি দেয়া
হবে মর্মে মালিকদেরকে সতর্ক করি। মালিকগণ মৌখিকভাবে খাবারের
মান ও রেস্টুরেন্টের সার্বিক অবস্থা উন্নতির প্রতিশ্রুতি দেন।
তবে এখানেই তার কার্যক্রম শেষ না করে মোবাইলে ও ফেসবুক
পেজের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার লোকজনের কাছ থেকে হোটেল ও
রেস্টুরেন্টগুলোর খাবারের মান ও পরিবেশ উন্নত হয়েছে কিনা নিয়মিত আপডেট নিতে থাকেন। এলাকার জনগণের সাথে কথা
বলে নিশ্চিত হওয়া গেল সব রেস্টুরেন্টেরই কাঁচা অংশগুলো পাকা করা হয়েছে, রান্নাঘর
থেকে দূরে পৃথক জায়গায় টয়লেট নির্মাণ হয়েছে। খাবারগুলো
খোলা না রেখে পর্যাপ্ত সতর্কতার সাথে ঢেকে রাখা হচ্ছে। ফলে, পূর্বের ন্যায় খাবারে
বিষক্রিয়া হয়ে ডায়রিয়া, আমাশয়, বমি প্রভৃতি প্রাদুর্ভাবগুলো অনেকাংশে কমে এসেছে।
জনসাধারণ মোবাইল কোর্টের প্রতি সন্তোষ জানিয়ে মোবাইল ও ফেসবুক পেজের মাধ্যমে
কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। গুণগত মানসম্পন্ন খাবার গ্রহণ যে
ভোক্তাদের এক ধরণের অধিকার তা এখানে প্রতিষ্ঠা
করতে পেরেছি।