উত্তাল মেঘনা
- গল্প লিখেছেনঃ তাহমিনা আক্তার
- তারিখঃ 2017-04-19
- ভিজিটঃ 2192
২০১৫ সালে সরকার ঘোষিত এবং
সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহ হতে অক্টোবর মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহজুড়ে ১৫ দিনব্যাপী পরিচালিত
'মা ইলিশ রক্ষা অভিযান' কর্মসূচীতে তৎকালীন কর্মক্ষেত্র ভোলাতে নির্বাহী
ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনাকালীন সময়ের একদিনের ঘটনাঃ
বাংলাদেশের দ্বীপজেলা ভোলার
দৌলতখান উপজেলার মধ্য দিয়ে বয়ে গেছে উত্তাল মেঘনা। ভাদ্র মাসের রুদ্রমূর্তি
মেঘনাকে শীতকালে দেখে চেনার উপায় নেই। এই মেঘনা প্রজনন মৌসুমে সমুদ্র থেকে ডিম
পাড়তে নদীতে আসার একটি প্রধান চ্যানেল এবং
ইলিশ প্রজননের গুরুত্বপূর্ণ অভয়াশ্রম। শত শত মাইল পাড়ি দিয়ে সমুদ্র থেকে বাংলাদেশে
রুপালি ইলিশ প্রবেশ করে এই নদী পথেই। প্রজননক্ষম মা ইলিশ রক্ষা অভিযানে আমার
দায়িত্ব পড়েছে ভোলার দৌলতখান উপজেলায় মেঘনার অংশে। অভিযান চলাকালীন একদিন বিকাল ৩:০০ টার দিকে উপজেলা মৎস্য অফিসার, থানার এসআই-সহ
অন্যান্যদের নিয়ে টহল দেওয়ার উদ্দেশ্যে লঞ্ছঘাটে রওয়ানা দিই। আবহাওয়া খুবই খারাপ-
প্রচণ্ড ঝড়ো বাতাস, গুঁড়ি-গুঁড়ি বৃষ্টি। উত্তাল মেঘনায় কাগজের নৌকার মত দুলছে
ট্রলারগুলো। চারপাশ জনমানবশূন্য। কিন্তু ঝড়ো আবহাওয়ার সুযোগ নিয়ে কিছু জেলে
নিষিদ্ধ সময়েও ইলিশ মাছ ধরার জন্য নদীতে নেমেছে। হয়তো ভেবেছে যে, মহিলা
ম্যাজিস্ট্রেট বলে এই প্রতিকূল আবহাওয়ায় মোবাইল কোর্টে আর বের হবে না। প্রজননের এই
সময়টাতে মেঘনা নদীতে ইলিশের পরিমান এত বেশি থাকে যে, মনে হয় নদীতে হাত ডুবালেই
ইলিশ মাছ উঠবে। তাই জেলেদেরকে এই প্রতিকূল পরিবেশও কোনভাবেই মাছ ধরা থেকে বিরত
রাখতে পারছে না। তারা জেল-জরিমানার ভয়, এমনকি জীবনের মায়া ত্যাগ করেও অনেক সময়
নদীতে নেমে পড়ছে।
যাই হোক, আমি আমার সাধ্যমত সীমিত
জনবল নিয়েও চেষ্টা করে যাচ্ছি। বৈরী আবহাওয়ার মধ্যেও উত্তাল মেঘনায় টহল দেওয়ার
জন্য মনস্থির করে লঞ্চঘাটে পৌঁছাই। নদীতে ট্রলার
নিয়ে নেমেই জেলেদেরকে মা ইলিশ ধরা থেকে প্রতিহত করতে হবে- এটাই ভাবনা। ভাবনামত আমার নেতৃত্বে মোবাইল কোর্ট টিম নদীতে নামে এবং কার্যক্রম শুরু করে।
ওইদিন কিছু জেলেকে আটক করা হয় এবং মাছ ধরার জাল জব্দ করা হয়। সরকার ঘোষিত নিষিদ্ধ
সময়ে ইলিশ মাছ ধরার কারণে 'মৎস্য রক্ষা ও সংরক্ষণ আইন, ১৯৫০'- এর অধীনে আটককৃত ও
দোষী হিসেবে প্রমানিত জেলেদেরকে সাজার আওতায় আনা হইয়, আর জব্দকৃত জাল ধ্বংস করা
হয়। এইরূপ ঝড়ো পরিস্থিতিতেও ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে নদীতে মোবাইল কোর্ট পরিচালিত
হয়েছে- এই সংবাদ সেদিন থেকে সারা উপজেলায় ছড়িয়ে পড়ে। ফলে জেলেরা এই নিষিদ্ধ সময়ে
নদীতে নামা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকার চেষ্টা করে বাকি দিনগুলোতে।
যেকোন দুর্যোগ, ঝুঁকিপূর্ণ
পরিবেশেও ম্যাজিস্ট্রেটরা প্রাণের মায়া ত্যাগ করে প্রজনন মৌসুমে সমুদ্র থেকে নদীতে
ডিম পাড়তে আসা এই মা ইলিশকে রক্ষা করতে মৎস্য অভিযান পরিচালনা করে। শত শত ম্যাজিস্ট্রেটের
ও তাদের মোবাইল কোর্ট টিমের সম্মিলিত প্রচেষ্টার এই ফসল দেশবাসী ভোগ করে, সেবছর
রেকর্ড সংখ্যক ইলিশের উৎপাদন হয়। এভাবেই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ভ্রাম্যমান
আদালত পরিচালনার মাধ্যমে বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপরাধ দমন ও প্রতিহত করার ক্ষেত্রে অবদান
রেখে চলে। দেশের কল্যাণে ভবিষ্যতেও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা এই ধারা অব্যাহত
রাখবে বলে আষা করি।
গল্পকারঃ
তাহমিনা
আক্তার (১৭৪০৭)
সহকারী কমিশনার (৩৩ তম বিসিএস), জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, বরিশাল
এবং
প্রশিক্ষণার্থী, রোল ১৮, ১০০ তম আইন ও প্রশাসন কোর্স, বিসিএস এডমিন একাডেমি, শাহবাগ, ঢাকা।