দাম দিয়ে কিনা দামহীন স্বাস্থ্যসেবা

Client Logo
  • গল্প লিখেছেনঃ  মোঃ আশিকুর রহমান চৌধুরী
  • তারিখঃ 2017-04-30
  • ভিজিটঃ 2018
 
নগরকেন্দ্রিক রাস্ট্র ও সমাজব্যবস্থায় আমাদের দেশের সাধারণ জনগণের অন্যতম মৌলিক চাহিদা স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া অনেকটা দুর্লভ হয়ে পড়েছে। তাই মানুষের এই মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার জন্য প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উপজেলা,জেলা সদর অথবা রাজধানীতে আসতে হয়। আর জেলাটির অবস্থান যদি হয় দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন কোন দ্বীপে তাহলে তো দুর্ভোগ আর বঞ্চনার পরিমান দাঁড়ায় চরমে। হ্যাঁ, আমি যে জেলার কথা বলছি তা হচ্ছে দ্বীপজেলা ভোলা। সৃস্টিকর্তা তাঁর দু’হাত দিয়ে এ দ্বীপ জেলাকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে শোভামন্ডিত করলেও নদী ভাঙ্গন এবং অনুন্নত স্বাস্থ্যসেবার কারণে এ জেলার সাধারণ জনগণকে অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়। দুর্গম এলাকা হওয়ায় এ অঞ্চলে কোন চিকিৎসক স্বেচ্ছায় আসতে চায় না আর কেহ বদলি হয়ে আসলেও এখানে এসে দ্রুত বদলী হয়ে অন্যত্র যাওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠে। এ অবস্থায় চিকিৎসকের শূন্যতার কারণে কতিপয় অল্পশিক্ষিত সামান্য চিকিৎসা জ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি নিজের নামের সামনে ডাক্তার পদবী যোগ করে দিব্বি চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ২৭ নভেম্বর ২০১৬ খ্রিঃ ভোলা জেলার চরফ্যাসন উপজেলায় মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার সময় উপজেলা সদরে একটি ফার্মেসীতে অভিযান চালানোর সময় লক্ষ্য করি ফার্মেসীর পিছনে ডাক্তারের চেম্বার রয়েছে, একটু কৌতূহল হয়ায় উকি দিয়ে খেয়াল করলাম একটা বোর্ডে তাঁর ভিজিটের পরিমান উল্লেখ রয়েছে, প্রথম সাক্ষাতে তাঁর ভিজিট ৩০০/= টাকা আর পরবর্তী প্রত্যেক ভিজিটের জন্য ১৫০/= টাকা। তাঁর প্যাড দেখার সময় লক্ষ্য করলাম সে কোন রেজিস্ট্রার্ড ডাক্তার নয়, তাঁর এমবিবিএস বা সমমানের কোন ডিগ্রী নাই অথচ সে ডাক্তার সেজে দিব্বি চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে যা মেডিকেল এবং ডেন্টাল কাউন্সিল আইন, ২০১০ এর ২৯ ধারা অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ। পরবর্তীতে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম সে নাকি দীর্ঘ দশ বছর যাবত এখানে চেম্বার খুলে ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন অথচ তাঁর শিক্ষাগত যোগ্যতা হচ্ছে মাধ্যমিক ফেল। তাকে ৫০,০০০/= টাকা অর্থদন্ডে দন্ডিত করে একটি মুচলেখা নিয়ে নেই যেন সে আর এইরকম কর্মকান্ডে লিপ্ত না হয়। এ চিত্র শুধু চরফ্যাসন নয় সমগ্র ভোলা জেলায় ব্যাপৃত। একইদিনে চরফ্যাসন উপজেলার বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিক, ডায়াগনস্টিক সেন্টার এবং নার্সিং হোমে অভিযান চালিয়ে আরও ভয়াবহ অবস্থা দেখতে পাই। যথাযথ কর্তৃপক্ষের কোনরকম অনুমোদনের তোয়াক্কা না করেই ক্লিনিক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের অবস্থাও ভয়াবহ, সেখানে কোন প্যাথলজিস্ট তো দূরের কথা কোন রেজিস্টার্ড ডাক্তারও নাই যে কিনা রিপোর্টের সত্যতা যাচাই করবে। বেসরকারী কারিগরী প্রতিষ্ঠান থেকে সদ্য পাশ করা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালানো হচ্ছে এবং যার সত্যতা নির্ধারণ করার কেহ নাই । আর এই পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য ভুক্তভোগী রোগীরা হাজার হাজার টাকা খরচ করছে যার বিনিময়ে পাচ্ছে অসম্পূর্ণ এবং ভুল রিপোর্ট যার ফলে তারা ভুল চিকিৎসার শিকার হচ্ছে। আরো একটি ভয়াবহ জিনিস লক্ষ্য করলাম তা হল রোগীদের এক্স-রে করা। সেখানে কোন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত রেডিওলজিস্ট নাই এক্স-রে রুম স্থাপন করার জন্য যে শর্ত রয়েছে তাঁর ন্যূনতম শর্তও মানা হচ্ছে না। এই কর্মকান্ড মেডিকেল প্র্যাকটিস এবং বেসরকারী ক্লিনিক ও ল্যাবরেটরী (নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাদেশ- ১৯৮২ এর ১৩ ধারা অনুযায়ী দন্ডনীয় অপরাধ। দুটি ক্লিনিকে অর্থদন্ড আরোপের পর লক্ষ্য করলাম অন্য ক্লিনিকগুলো তালা লাগিয়ে পালিয়ে গেছে। এ থেকে সহজেই অনুধাবন করা যায় যে তাদের অবস্থাও একইরকম। নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে এবং স্বাস্থ্যবিভাগের নিয়মিত তদারকির মাধ্যমেই এই অবস্থা থেকে পরিত্রান পাওয়া সম্ভব।

মোঃ আশিকুর রহমান চৌধুরী (১৭৪৩০) সহকারী কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, ভোলা। রোলঃ ১০, ১০১ তম আইন ও প্রশাসন প্রশিক্ষন কোর্স।  




 প্রিন্ট